ঢাকা আহছানিয়া মিশন টোব্যাকো এটলাসের ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদন উল্লেখ করে জানায়, দেশে প্রতি বছর তামাক সেবনের কারণে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সে হিসেবে প্রতিদিন ৪৪২ জনের মৃত্যু হচ্ছে। ২০১৭ সালের গ্যাটসের সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক সেবন করে। তারমধ্যে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ, আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি ও ক্যান্সার রিসার্চ-ইউকের যৌথ গবেষণায় জানানো হয়, বাংলাদেশে তামাক থেকে বার্ষিক রাজস্ব আসে ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। অন্যদিকে তামাক ব্যবহারে ক্ষতি হয় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার।
মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রবীন নবীনদের তামাক তথা ধূমপানে উদ্বুদ্ধ করছে। আর টোব্যাকো কোম্পানিগুলো নানাভাবে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করছে। তারা কনসার্টে বিনিয়োগ করে। সেখানেও তরুণরা তামাক সেবনে জড়িয়ে যাচ্ছে।
তামাকের ব্যবহার কমাতে উচ্চহারে করারোপ করার প্রস্তাব রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘সিগারেট ও অন্যান্য তামাকপণ্যে অল্প অল্প কর না বাড়িয়ে বরং এক ধাক্কায় অনেকটুকু করারোপ করতে হবে। এতে করে তামাকসেবীদের সংখ্যা কমবে এবং সরকার রাজস্ব বেশি পাবে।’
আজ ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ১৯৮৭ সাল থেকে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসটি পালন করছে।
দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে তামাক নির্মূল করতে হলে তামাকের উৎপাদন ও ব্যবহার দুটোই কমিয়ে আনতে হবে। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়নসহ বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অংশীজনদের প্রায়োগিক ভূমিকার মাধ্যমে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যার যেখানে যতটুকু পতিত জমি আছে, তা চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সকলকে ধূমপান ও তামাকের ভয়াল নেশা থেকে দূরে থাকতে হবে।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে সকাল ৮ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়য়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করবে।